হাসপতালের জন্য সরকার থেকে কী বরাদ্ধ হচ্ছে কিংবা কীভাবে হাসপাতাল চলবে তা পরিচালনা পর্ষদও বলতে পারেনি। করোনাকালীন সংকটেও গত চার মাসে হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সভা হয়নি বলে স্বীকার করেছেন কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান।
হাসপাতাল সুপারের পিএর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও তার কোনো তদন্ত না হওয়ায় হতাশ স্থানীয় প্রশাসন। এ হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণার পর সাংসদ সেলিম ওসমান ব্যক্তিগত তহবিল থেকে নার্স ও ব্রাদারদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। চিকিৎসকদের থাকার জন্য নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের গেস্ট হাউজের সব কক্ষ ছেড়ে দেয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী জানান, হাসপাতালের কর্মীদের এত সুযোগ-সুবিধার পরও নারায়ণগঞ্জের মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। তিনি হাসপাতালের সব অনিয়ম তদন্তের দাবি জানান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও দীর্ঘ সময়ে হাসপাতালে আইসিইউ চালু না হওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফোন করতে করতে আমি রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে গেছি। কমপক্ষে অর্ধ শতাধিকবার আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছি। আমাকে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে মিথ্যা আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছিল ১ জুনের মধ্যে আইসিইউ চালু করা হবে। যদিও গত ১৭ মে চালু করার চূড়ান্ত নির্দেশনা ছিল, কিন্তু ১৭ জুন চলে গেল। এখন জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার কিছু বলার নেই।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পরও যদি এত দেরি হয় সেখানে কী বলার আছে!
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্দেশ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘যদি নাই-বা পারবেন তাহলে মিথ্যা আশ্বাস দেবেন কেন? আপনাদের কথার ওপর নির্ভর করে তো আমরা মানুষকে আশ্বাস দেই। একটা রোগীর মৃত্যু যদি আইসিইউ না থাকার কারণে হয়ে যায় বা আইসিইউ সেবাটা না দিতে পারি, তখন আমরা নিজেকে নিজের কাছে ক্ষমা করতে পারি না।’
নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি বলতে বলতে এখন ক্লান্ত হয়ে গেছি। রোগী আনা নেয়ায় ব্যবহৃত দুটি অ্যাম্বুলেন্সের টাকা আমি দিচ্ছি। নমুনা সংগ্রহের জন্য আমার পাঁচজন লোক কাজ করছেন। তাদের খরচ আমি দিচ্ছি। সব ধরনের সহযোগিতা করছি শুরু থেকে। কিন্তু তারপরও মানুষ যদি তার প্রাপ্য সেবাটা না পায় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।’
অপরদিকে সাংসদ সেলিম ওসমান বলেন, ‘অসুস্থ শরীর নিয়ে বারবার হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি। চিকিৎসকদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করেছি। চারটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি, অন্তত মানুষ যাতে চিকিৎসাসেবাটা পায়। কিন্তু আইসিইউ চালু হয়নি এখনও। এটা দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও ৩০০ শয্যা হাসপাতাল আমার নির্বাচনী এলাকায়। কিন্তু আমার দায়িত্ব হাসপাতাল দেখাশোনা করা না। এটা স্বাস্থ্য বিভাগের কাজ। মোটকথা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলার পরও আইসিইউ চালু করতে অস্বাভাবিক বিলম্ব হচ্ছে।’
এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপার ডা. গৌতম রায় বলেন, ‘১০ শয্যার একটি আইসিইউ শুধুমাত্র ১০টি শয্যা ও কিছু আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের জন্য চালু করা যাচ্ছে না। যতটুকু শুনতে পেরেছি যে নতুন শয্যা আনা হয়েছে এবং সেগুলো বিমানবন্দরে রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগযোগ রাখছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেন বলেই সেই কথায় আমরাও আশ্বস্ত করি।’
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের খানপুরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়। সেখানে ১০ শয্যার একটি আইসিইউ ওয়ার্ড থাকার কথা। এখন করোনা হাসপাতাল হিসেবে চালুর দুই মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আইসিইউ ইউনিট চালু না হয়নি এখনও।